গরিব জনগণকে ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে সরকার। করোনাকালে দেশের জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই কর্মসূচি ছাড়াও খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) আওতা বাড়াবে সরকার। সেই সঙ্গে বেশি খাদ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে নতুন বাজেটে।
দেশে যখন চালের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, তখন খোলাবাজারে চাল বিক্রি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সরকার, যা ওএমএস নামে পরিচিত। এটা শুধু পৌর এলাকার মানুষের জন্য।
গ্রামের ৫০ লাখ দুস্থ পরিবারকে ১০ টাকা দরে চাল খাওয়ানোর কর্মসূচি চালু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে। কার্ডধারী প্রতি পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল বিতরণ করা হয় সরকারি তালিকাভুক্ত ডিলারদের মাধ্যমে।
আগামী বাজেটে এই দুটি জনপ্রিয় কর্মসূচি অব্যাহত থাকছে বলে জানিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।
ওএমএস কর্মসূচির জন্য আড়াই লাখ টন চাল এবং ৪ লাখ ২০ হাজার টন গম বরাদ্দ থাকছে। প্রতি কেজি চাল বিক্রি করা হবে ৩০ টাকা দরে। আর গম ১৮ টাকা।
চলতি বাজেটে ওএমএসের আওতায় দেড় লাখ টন চাল ও ৩ লাখ টন গম বিতরণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ আওতায় গ্রামের ৫০ লাখ দুস্থ পরিবারের মধ্যে ১০ টাকা দামে চাল বিতরণের জন্য ৭ লাখ ৬০ হাজার টন বরাদ্দ থাকছে আসন্ন বাজেটে।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ২ কোটি ৪৫ লাখ লোক নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছে। এটি মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ।
এদের সুরক্ষা দেয়া সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্যের পাশাপাশি খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর অগ্রাধিকার দিতে হবে সরকারকে।
যোগাযোগ করা হলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলোকে বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সমাজের বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি অংশের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। এদের সুরক্ষা দিতে হলে আগামী বাজেটে সবার জন্য খাদ্যনিরাপত্তায় বিশেষ নজর দিতে হবে সরকারকে। তা না হলে সমাজে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।’
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে যাতে কোনো ধরনের সংকট দেখা না দেয়, সে জন্য আগামী বাজেটে বেশি খাদ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা এবং একই সঙ্গে ক্রয়ের (প্রকিউরমেন্ট) ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কেউ চালের বাজার যাতে অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে জন্য ওএমএস চালু থাকছে।
বেশি দামে কিনে কম দামে চাল খাওয়ানের ফলে এ খাতে প্রতিবছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়।
আগামী অর্থবছরে খাদ্যে ভর্তুকি ৪ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে, যা চলতি বছর চেয়ে ১৩ শতাংশের বেশি।
সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা
নতুন বাজেটে অভ্যন্তরীণ এবং আমদানি মিলিয়ে খাদ্যশস্য সংগ্রহের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন। এটি চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে ২৪ লাখ ১৭ হাজার টন চাল। অবশিষ্ট ৭ লাখ ৫০ হাজার টন গম। সরকার আগামী বছর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করবে ১৯ লাখ ১২ হাজার টন এবং গম দেড় লাখ টন।
আর বিদেশ থেকে আনবে ৫ লাখ ৫ হাজার টন চাল এবং গম ৬ লাখ টন। এই চাল ও গম আমদানি করতে সরকারের খরচ হবে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, খাদ্যশস্য সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়ছে, তা অর্জন করতে পারলে ভবিষ্যতে দেশে খাদ্যের কোনো ধরনের সংকট হবে না।
মজুত এখনও কিছুটা ঝুঁকিতে
যথাসময়ে ক্রয় করতে না পারায় সরকারি গুদামে খাদ্য মজুত মাঝখানে তলানিতে পৌঁছেছিল। তবে সংগ্রহ অভিযান জোরদার করায় বর্তমানে (৩০ মে ২০২১) দেশে খাদ্য মজুত বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টন।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, দেশের জনগণের খাদ্যের অভাব দূর করতে মজুত কমপক্ষে ১০ লাখ টন থাকা বাঞ্ছনীয়। সেদিক থেকে বাংলাদেশ এখনও মজুতের দিক থেকে কিছুটা ঝুঁকিতে রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে খাদ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, গতবার ক্রয় যথাসময়ে না করার কারণে মজুত কমে যায়। তবে এখন খাদ্য সংগ্রহ অভিযান জোরদার করায় মুজত বাড়ছে। আশা করা যাচ্ছে, জুন শেষে মজুত ১৫ লাখ টনে উন্নীত হবে।
বাজেট ১০ শতাংশ বেশি
নতুন বাজেটে খাদ্য-বাজেটের আকার প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। চলতি বাজেটে খাদ্য খাতে বরাদ্দ প্রায় ১৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
খাদ্য-বাজেটের ১১ শতাংশ ব্যয় হয় পরিচালন খাতে। অবশিষ্ট ৮৯ শতাংশই যায় খাদ্যশস্য ক্রয়ে।